তখন আমি HSC এর ছাত্র, চট্রগ্রাম শহরের এক মেসে থাকতাম। এক চোর সেদিন এক ছাত্রের মানি ব্যাগ চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে যায়। পরে সব ছাত্ররা মিলে ওই চোরকে এমন বেদড়ক পিঠিয়েছিলেন, পায়ের তালু থেকে সারা শরীর। পায়ের তালু সোজা করে, ওখানে বেল্ট দিয়ে আঘাত করেছিলেন। আমি সেদিন ওর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলাম বলে, সবাই আমাকে নিয়ে হাসিতামাশা করেছিল। ওই ছাত্রদের মধ্যে আজ অনেকে ব্যারিস্টার, অনেকে ব্যাংকার এবং অনেকে বড় বড় পোস্ট এ চাকরি করে। কিন্তু স্রস্টার একজন সৃষ্টিকে নির্মমভাবে আঘাতকরতে তারা একটুও কুণ্ঠিতবোধ করেনি। দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে মারামারি লেগে বিশ্ববিদ্যালয় অনিদিস্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি আবার মেসে গিয়ে উঠি। তখন রামাদান মাস, ফজরের নামায আদায় করে যখন আমরা বাসার সামনে আসি। দেখলাম এক কিশোর ছেলেকে একদল লোক কারেন্ট এর থাম/ খুঁটিতে বেঁধে নির্মমভাবে পিটাচ্ছে। ওর দুইহাতের আঙ্গুল খুঁটিতে রেখে ইট দিয়ে আঘাত করে ওর দুই হাতের আঙ্গুল তেতলে দিয়েছে যেন আর চুরি করতে না পারে। আমি সেদিন ওদের অনেক কাকুতিমিনতি করেও থামাতে পারি নি। পরে শুনেছি পাশের বাড়ির রড চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল ওই কিশোর। আজ আবার যখন দেখলাম একজন শিশুকে চুরির অপরাধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে, এই হত্যা অন্ধকারযুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। শিশুটি আর্তনাদ করে পানি চেয়েছিল তাকে তারা বলেছিলঃ "‘পানির বদলা ঘাম খা!"। মানুষ কতটা নির্দয় হলে এইরকম করতে পারে। এই হত্যার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। যেন কেউ কখনো এইরকম হত্যার সুযোগ না পায়। কেউ ইচ্ছে করে চুরি করে না, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। আমরা এখনো সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্য রোধ করতে পারিনি । আমরা কি পেরেছি ওদের বেঁচে থাকার নুন্নতম সুযোগটুকু দিতে। আজ আমরা যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করি। বহুমূল্যবান খাবার, কাপড়, ফোন ল্যাপটপ ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা একবারও ভেবে দেখি না আমদের পাশেও অনেকে না খেয়ে আছে, অনেকের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অবলম্বনটুকুও নেই। আমরা যদি ওদেরকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিতে না পারি, ওদের আঘাত করার অধিকারও আমাদের নেই।
top of page
bottom of page
Comments