আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের কথা, একদিন আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যখন প্রচণ্ড ব্যাথা এবং যন্ত্রনায় আমি পাগল প্রায়,মা তখন আমার পাশে এসে বসেছিলেন। তখন আমি আমার মুখমণ্ডলে মায়ের হাতটা শক্ত করে কতক্ষণ চেপে ধরে রেখেছিলাম মনে নেই। আমার কাছে তা তখন স্পষ্ট ব্যাথানাশক হিসেবে অনুভূত হয়েছিল। পড়াশুনার কারণে ক্লাস সেভেন থেকে মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকি, মায়ের পাশে থাকার সৌভাগ্য আমার সেভাবে হয়ে উঠে নি। বিভিন্ন স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে যখন বাড়িতে যেতাম, তখন তিনি আমার প্রিয় খাবার গুলো রান্না করতেন, মাছ, মাংসের বড় অংশটা খেতে দিতেন। আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি উনার কখনো চোখে পড়ে না, বলে শুকিয়ে যাচ্ছি। আমি তখন মনে মনে হাসি এবং চিন্তা করি “এই না হল মা”। আমি যখন উচ্চশিক্ষার নিমিত্তে আমেরিকা আসার জন্য সব কিছু ফাইনাল করি, তখনো মায়ের তীব্র অমত ছিল। বলেছিল আমি এত কষ্ট করে বড় করেছি, আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার জন্য? আরও বলেছিল উনার অত টাকার দরকার নেই, দেশে ১০-১২ টাকা দামের চাকরি হলেই চলবে। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শেষে রাজি হয়েছে। তখন আমি মাকে কিছুই বলি নি। আমি মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদেছি। এখনো মাঝে মাঝে আমার চোখ মায়ের কথা চিন্তা করে অশ্রু বিসর্জন দেয়।
পৃথিবীতে যদি কোন মূল্যবান সম্পদ থাকে, তবে তা হচ্ছে মা। আমরা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন মায়ের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অন্ত থাকে না এবং আমরা নিজের অজান্তেই মাকে অনুভব করি। মা এবং সন্তানদের মধ্যে টেলিপ্যাথি যোগাযোগ মনে হয় সবচেয়ে বেশি হয়। অশুভ এবং অকল্যাণকর কোন কিছু আমরা নিজে অবগত হওয়ার পূর্বেই মায়ের কাছে বার্তা পৌঁছে যায়। আমার মনে হয়, মা এবং সন্তানের মধ্যে ভালবাসা ব্যতীত, অন্য সমস্ত ভালবাসার মধ্যে স্বার্থ জড়িত থাকে। নিঃস্বার্থ ভালবাসার একমাত্র প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল মা। আমাদের সাফল্য এবং সুস্থতার অন্তরালে মায়ের অদৃশ্য হাত রয়েছে। তাইতো স্রস্টার পরেই মাকে আসীন করা হয়েছে প্রায় সব ধর্মীয় গ্রন্থে। যারা মাকে চিরজীবনের জন্য হারিয়েছে এবং মায়ের কাছ থেকে অনেক দুরে কোথাও থাকে, তারা মায়ের মূল্য, তার প্রতি ভালবাসা এবং আবেগ যে ভাবে প্রকাশ ও উপলব্দি করতে পারে। যারা মাকে হারাইনি এবং কাছাকাছি থাকে, তারা তা সেভাবে পারে না।
।।।।।। আজ মা দিবসে পৃথিবীর সমস্থ মায়ের প্রতি অনেক ভালবাসা।।।।
Comments