top of page
Writer's pictureNiaz Murshed Chowdhury

কাজ , কৌশল ও মানব জীবন সমস্যা সমাধানের ৫০টি কৌশলের ব্যাখ্যা

অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহামমদ ফিরোজ

এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি

(ক) সমস্যাটি বোঝার জন্য কৌশলসমূহ ১) সমস্যা সম্বন্ধে পরিষকার ধারণা হওয়া (Clarify): অসপষ্ট সমস্যা সমাধান করা কঠিন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ও পরিষকার সমস্যা সমাধান করা সহজ। সুতরাং প্রথমেই সমস্যা সম্বন্ধে পরিষকার ধারণা নিতে হবে। যদি আপনার স্ত্রী বলে ‘তুমি তেমন সাহায্যকারী না’ তাহলে বের করুন সাহায্যকারী বলতে সে কী কী বোঝাচ্ছে। যদি আপনার মা নতুন ডিভিডিটা চালাতে পারছেন না তাহলে খুঁজে দেখুন উনি ঠিক কোনটি পারছেন না। যদি অংক বাড়ির কাজ হয় তাহলে প্রশ্নটা ভালো করে বুঝে পরিষকার ধারণা নিন।

২) সমস্যার মূল উপাদানগুলো চিহ্নিত করুন (Key Elements): প্রতিটা সমস্যারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সময়ের অপচয় হয় এবং মূল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা উপাদান থেকে মন দূরে সরে যায়। সুতরাং বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান/তথ্যগুলো চিহ্নিত করুন। যদি সাইকেলটা চলার সময় শব্দ করে তাহলে ঠিক কোন অংশটা শব্দ করে শুধু সেটুকুই খুঁজে বের করুন।

৩) সমস্যাকে মনের চোখে দেখুন (Visualization): কখনো কখনো সমস্যার খুঁটিনাটি অংশও আমরা মনের চোখে দেখতে পাই। এটা সমস্যাকে বুঝতে সাহায্য করে। কখনো কখনো এটা করা যায় না, কারণ হয়তো আগেই ঘটে গেছে এবং দেখা যায় না। ঠিক এসব ক্ষেত্রেই সমস্যার মূল উপাদানগুলোকে দেখে নিতে হবে। যেমন যদি চাবি ছাড়া তালা খুলতে চান তাহলে তালার গঠনটা মনের চোখে দেখে নিতে হবে।

৪) সমস্যা, প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়া ও অবস্থার একটা চিত্র বা রেখাচিত্র আঁকা (Picture or diagram drawing): সমস্যাটা চোখে দেখতে পারলে বুঝতে সহজ হয়। কিন্তু মনে মনে খুব বেশি বড় চিত্র ধরে রাখা যায় না। তাই কাগজে আঁকা ছবি বা রেখচিত্র বেশ সাহায্য করে। দুটো প্লেনের আকাশে সংঘর্ষ যদি হিসাব করে বের করতে হয় তাহলে কাগজে তাদের ওড়ার পথ ও গতি এঁকে নেয়া যায়। যদি সন্ত্রাসীদের ঘরে আক্রমণ করতে হয় জিমিম উদ্ধারের জন্য তাহলে ওই বাড়ি, ঘর, দরজা, জানালা, জিমিমদের অবস্থান ইত্যাদির ছবি এঁকে নেয়া হলে কাজটা সহজ হয়। যদি ভোক্তাদের কাছে দ্রুত ভোগ্যপণ্য পৌঁছে দিতে হয় তাহলে ওই প্রক্রিয়ার ধাপগুলো কাগজে এঁকে নেয়া যায়।

৫) সমস্যা এবং প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়ার (relevant process) মডেল দাঁড় করাতে হবে (Create model ): সমস্যা ও প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়ার মডেল দাঁড় করাতে হবে, যার ভেতর প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কেন্দ্রীভূত হবে। যেমন- যদি গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হয় তাহলে বস্তু ও বলের একটা কম্পিউটার মডেল দাঁড় করাতে হবে। যদি মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে চলবে এমন গাড়ি বানাতে চান তাহলে মডেল তৈরি করুন। যদি আন্তর্জাতিক শত্রুতা কমাতে চান তাহলে কারণগুলোর একটা মডেল দাঁড় করান।

৬) নিজেই মূল সমস্যা, মূল প্রক্রিয়া বা সমাধান হয়ে কল্পনা করুন (imagine being the problem): কল্পনার দৃষ্টিতে দেখলে কোনো সমস্যা বুঝতে সহজ হয়। সমস্যা, মূল প্রক্রিয়া ও সমাধান সম্বন্ধে আরো ধারণা হয় নিজে সমস্যার সাথে এক হয়ে কল্পনা করা। আইনস্টাইন কল্পনার আলোর রশ্মিচ্ছটা হয়ে স্থান ও কালকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। যদি ফুটবলে জিততে চান তাহলে কল্পনা করুন আপনি বল নিয়ে একের পর একজনকে পার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। গোলের সামনে গিয়ে কিক করে গোল দিচ্ছেন।

৭) সমস্যার মূল উপাদানকে (Key element) অনুকরণ (Simulate) করুন বা তা নিয়ে মহড়া দিনঃ জটিল এবং অসপষ্ট সমস্যাগুলোকে বোঝা কঠিন হয়। তাই ওই সমস্যার মূল উপাদানগুলোকে নিয়ে মহড়া দিন এবং অনুকরণ করুন। যদি কোনো ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা ভাবছেন তাহলে ওই ঘটনার অনুকরণ করুন, মহড়া দিন তারপর সম্ভাব্য ফলাফল দেখুন। যদি কারো সামাজিক সাফল্য আনতে সাহায্য করতে চান তাহলে ওই লোকের মতো আচরণ করুন এবং পরিণাম দেখুন। যদি প্লেন বিস্ফোরণের কারণ জানতে চান তাহলে উড্ডয়নটা অনুকরণ করুন এবং বিস্ফোরণের সম্ভাব্য পথগুলো মহড়া করে দেখান।

৮) কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ বিবেচনা করুনঃ সমস্যা কখনো কখনো বিমূর্তভাবে আসে। সঠিক কোনো রূপ নিয়ে আসে না। তাই বাস্তব উদাহরণ দিয়ে সমস্যাটা বুঝতে হয়। যেমন ডাইনোসরের হাড় থাকায় ডাইনোসরের আকার আকৃতি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। তাহলে সাইকোটিক (মনোবৈকল্য) হয় কেন- এর কারণ খুঁজতে গেলে প্রকৃত সাইকোটিক রোগীর বাস্তব কারণগুলো বিবেচনা করতে হবে। যদি ব্যাঙের মৃত্যুর কারণ খুঁজতে হয় তাহলে মৃত ব্যাঙকে নিয়ে কারণ খুঁজতে হবে।

৯) চরম উদাহরণগুলো বিবেচনা করতে হবে (Extreme): চরম উদাহরণ কী কী হতে পারে সেগুলো বিবেচনা করেও সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলো বিবেচনা করা যায়। এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার পথ খুলে দেয়। যদি মনে করেন পুলিশে চাকরি টিকে থাকা নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তার ওপর তাহলে অতি উঁচু ও নিচু বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পুলিশের অবস্থা পরীক্ষা করুন। যদি জানতে চান আকাশের কালো গহ্বরের শেষ পরিণতি কী, তাহলে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় স্থায়ী অথবা বিশ্বের সব গিলে ফেলছে এমন কালো গহ্বরের কথা চিন্তা করুন। যদি জানতে চান তাপ কিভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহেক প্রভাবিত করে তাহলে চরম ০ (শূন্য) তাপমাত্রার (alsolute o) প্রভাব চিন্তা করুন।

১০) দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করুনঃ সমাজে অপরাধ কমাতে হলে দুষকৃতকারীর এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টিতে সমাজটাকে দেখুন। কোনো একজন জিমিমকারী সন্ত্রাসীকে আত্মসমর্পণ করাতে চাইলে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। যদি কুকুরের কামড় এড়াতে চান তাহলে কামড়ানো কুকুরের দৃষ্টি নিয়ে দেখার চেষ্টা করুন।

১১) স্তর ও ব্যবস্থা (level and system) বিবেচনা করুনঃ যদি ত্বকের ক্যান্সার রোধ করতে হয় তাহলে পরিবেশ, কোষের ভেতরের ও বাইরের স্তরের ঘটনা যা ক্যান্সার ঘটায় তা বিবেচনা করুন। যদি স্কুলের সংঘর্ষ কমাতে চান তাহলে ওই ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠীর ব্যবস্থা বিবেচনা করুন। আবহাওয়া সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিতে চাইলে স্থানীয় অবস্থা এবং যা সমানে আসছে সেই স্তরের অবস্থাগুলো বিবেচনা করুন।

(খ) কাজকে সহজ করার কৌশল ১২) সমস্যাকে সহজ করে ফেলুন (Simplification): কোনো সমস্যার জটিলতায় আমরা হতবুদ্ধি হয়ে যাই। সেসব ক্ষেত্রে সমস্যাকে সহজ করে ফেললে সমাধান করা যায়। গাড়িতে যতটা তেল আছে তা দিয়ে কতদূর যাওয়া যায় বের করতে হলে কতটা আছে এবং প্রতি লিটারে কত কিলোমিটার যায় তা দিয়ে হিসাব করে বের করুন, সহজ করার জন্য দশমিক সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসাব করুন রাউন্ড ফিগারে। যদি সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে দেশ রক্ষা করতে হয় তাহলে ওদের সাহায্যকারী দেশগুলো চিহ্নিত করে সম্ভাব্য পথগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।

১৩) কোনো একটি অংশ পৃথকভাবে একবারে সমাধান করুন (solve one part at a time): সমস্যাগুলোকে পৃথক অংশে ভাগ করে একবারে একটা একটা করে অংশ সমাধান করলে কাজটা সহজ হয়। যেমন- মধ্যপ্রাচ্যের বিবদমান আন্তর্জাতিক সংঘাত কমাতে হলে কমপক্ষে দুটো দেশকে চিহ্নিত করুন যারা বিবদমান এবং তাদের দিকে সমাধানের মন দিন। যদি মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাতে চান তাহলে প্রথমে রোবট পাঠান। যদি ব্যক্তিত্ব উন্নত করতে চান তাহলে একটা ব্যবহার বা আচরণের দিকে মন দিন এক একবারে। যেমন- প্রথমে মানুষের সাথে নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে কথা বলা।

১৪) সমস্যাকে আবারো নতুন করে যথাযথভাবে স্থির বা নির্ধারণ করুন (Redefine): যদি মনে হয় কোনো সমস্যা সমাধানযোগ্য না তাহলে সমস্যাটা সমাধানের আকাঙ্ক্ষার পেছনে মূল কারণগুলো ব্যাখ্যা করুন এবং সমাধান করা যাবে এমন কিছু হিসেবে নির্ধারণ করুন। যেমন- যদি কোনো বিশেষ শস্য জমিতে চাষযোগ্য না হয় তাহলে কৃষক নির্ধারণ করবে কেন এই শস্যের চাষ কাম্য। যদি দেখা যায় তাতে লাভ বেশি তাহলে সে বিবেচনা করবে অন্য কী কী শস্য চাষ সমান লাভজনক। অথবা ওই জমি চাষ না করে কিভাবে লাভজনকভাবে অন্যভাবে ব্যবহার করা যায়। তাহলে সে সমস্যাটাকে যথাযথভাবে নির্ধারণ করল যে, ওই শস্য চাষ ছাড়াই জমিকে অন্যভাবে ব্যবহার করা যায়, যাতে লাভ বেশি।

(গ) কারণ খুঁজে বের করার কৌশল (determine Cause) ১৫) সমস্যার আগে, সময় ও পরে ঘটা ঘটনার তথ্য সংগ্রহ: চোখে পড়ে এমন কিছু দ্বারা সমস্যা সংঘটিত হয় এবং সমস্যা দৃঢ় হয় ওই ঘটনার পর ঘটে যাওয়া অন্য ঘটনায়। যেমন- ক্যারি যদি প্রায়ই হঠাৎ প্রচণ্ড রাগারাগি করে তাহলে তাকে ভালো করে দেখতে হবে এবং রাগের সময় এবং পরে যা যা ঘটনা তা ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে।

লক্ষ্য করা যাবে যে, রাগের আগে তাকে কঠিন বাড়ির কাজ করতে চাপ দেয়া হচ্ছিল এবং রাগের শেষে তাকে ওই কাজ করতে হবে না বলা হলো। যদি দেখেন জেক এবং পরিপাকে সমস্যা আছে এবং পেটের সমস্যার আগে, ওই সময় এবং তার পরে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু ঘটে না। তাহলে কোনো বিশেষ খাবারে এটা হচ্ছে না, তাহলে খাবার নিয়ন্ত্রণ কোনো কাজে আসবে না। অপারেশনের আগে, অপারেশনের সময় ও পরে রোগীর বিষণ্নতা দূর করতে চান তাহলে তাকে ওই তিনটি পৃথক সময়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।

১৬) তথ্যকে টেবিল, চার্ট ও তালিকায় সাজিয়ে ফেলুন এবং প্যাটার্ন অনুসান করুনঃতথ্যগুলোকে টেবিল, চার্ট ও তালিকায় সাজিয়ে ফেললে নির্দিষ্ট কোনো প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়। প্যাটার্ন সমস্যার কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। সুতরাং স্ত্রীকে মারে এমন পুরুষের পরবর্তী স্ত্রী প্রহার সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিতে হলে আগের এ ধরনের ঘটনার সব তথ্য জোগাড় করতে হবে। যদি গাড়ির দুর্ঘটনা কমাতে হয় তাহলে পূর্বের দুর্ঘটনাগুলোর কারণ সংগ্রহ করে টেবিল আকারে সাজাতে হবে, যা থেকে প্যাটার্ন পাওয়া যাবে। যেমন মাতাল তরুণ যারা সীমার উর্ধ্বে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল।

১৭) সমস্যাকে আরো খারাপ বা মন্দ করে দেখতে হবে (make the problem worse):সমস্যার কারণ খুঁজতে হলে কখনো কখনো সমস্যাকে আরো মন্দ কল্পনা করতে হয়। যদি আকাঙ্ক্ষিত সমাধান কঠিন, অসুবিধাজনক, ব্যয়বহুল ও বিপজ্জনক হয় তাহলে এরকম করতে হয়। যেমন- স্ট্রবেরি খেলে যদি নাক লাল হয় তাহলে লাল কমে যাওয়ার জন্য অল্প অল্প করে স্ট্রবেরি খেতে হবে। দৈনিক রুটিনের পরিবর্তনে যদি মানসিক প্রতিবী শিশুর প্রচণ্ড রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে অল্প অল্প করে রুটিন পরিবর্তন করুন।

১৮) সমস্যা আছে এবং সমস্যা নেই এমন অবস্থাগুলোকে তুলনা করুন: এরকম করে সমস্যার কারণগুলো অনেক সময় চিহ্নিত করা যায়। যেমন ‘জীবাণু সংক্রমণের জন্য প্রসবকারী মায়ের মৃত্যু রোধ’ করতে হলে যাদের প্রসব হয়েছে কিন্তু তাদের মৃত্যু হয়নি- এমন মায়েদের যত্নের সাথে তুলনা করতে হবে। ঠিক তেমনি ঊনবিংশ শতাব্দীর গবেষকদের মতো আপনিও দেখতে পাবেন যে, যেসব ডাক্তার হাত না ধুয়ে প্রসব কাজে সাহায্য করেছেন সেইসব মায়ের জীবাণু সংক্রমণে মৃত্যু ঘটে কিন্তু ধাত্রীরা হাত ধুয়ে প্রসব কাজে সাহায্য করে- এমন মায়েদের জীবাণু সংক্রমণে মৃত্যু হয় না। যদি এইডসের কারণ খুঁজতে চান তাহলে যাদের এইডস আছে এবং যাদের নেই তাদের দুই দলকে পর্যবেক্ষণ করুন কয়েক বছর ধরে। কারণ খুঁজে পাবেন। যারা ভয়াবহ অপরাধ করে তারা কী কী কারণে ওসব করে জানতে হলে দোষী ব্যক্তির সাথে নির্দোষ ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার তুলনা করুন।

১৯) একাধিক কারণ (Multiple cause) এবং তাদের পারসপরিক ক্রিয়া (মিথস্ক্রিয়া) বিবেচনা করুন: কখনো কখনো একাধিক প্রভাব একটা সমস্যা ঘটার কারণ হিসেবে থাকে। যেমন- কার্বন মনোক্সাইডের ঘরের ভেতরের প্রবাহ নির্ভর করে অনেক কারণের ওপর যেমন (১) বাতাসের প্রবাহের দিক, বাতাসের গতি, তাপ নিঃসরণের পাইপ ছাদের খুব কাছাকাছি (১ মিটারের কম) এবং ঘরে যে আগুন জ্বলছে তার পরিমাণ অনেক বেশি ইত্যাদি। এতসব বিবিধ কারণ যদি খুঁজে না বের করি তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না। সুতরাং একাধিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

২০) রৈখিক প্রভাবের বাইরের (non linear) অবস্থা বিবেচনা করুন (অসমান্তরাল প্রভাব):যেমন যত বেশি পরিমাণে পারদ খাওয়া পড়বে সমস্যার তীব্রতা তত বেশি হবে। কিন্তু কোনো কারণ ও ফলাফলের মধ্যে এই ধরনের রৈখিক সম্পর্ক থাকে না, বক্ররৈখিক সম্পর্ক থাকে। যেমন- সামান্য পরিমাণে জাগ্রত হলে মানুষের কাজ সম্পাদন বেড়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত জাগ্রত অবস্থা তার ক্ষতি করে। ফলে বক্ররৈখিক সম্পর্কগুলোও বিবেচনা করতে হবে।

(ঘ) বাইরের সাহায্য কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য সমাধান চিহ্নিতকরণের কৌশল ২১) বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: যখন নিজেদের দ্বারা সম্ভব না তখন নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। যেমন- ভাঙা কল ঠিক করার জন্য বা লাজুক ছেলের লজ্জা ভাঙার জন্য।

২২) লিখিত তথ্যের সাহায্য নিন: সমস্যা সমাধানের জন্য বই বা ম্যানুয়ালের সাহায্য নেয়া যায়। সমাধানের নতুন কৌশলের ওপর বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরিতে নানা ধরনের বই পাওয়া যায়। ‘How To’ ধরনের নাম থাকে এসব বইয়ের। ইন্টারনেটেও নানা ধরনের সমাধান পাওয়া যায়। যেমন- নাকের আকৃতি পরিবর্তন করতে ‘কসমেটিক’ বা ‘নাক’ সার্জারি সম্বন্ধে বই থেকে ধারণা নিতে পারেন।

২৩) সঠিক যন্ত্র বা কারিগরি কৌশলের সাহায্য নিন: সমাধানের জন্য কখনো কখনো সঠিক যন্ত্র যেমন- হাতুড়ি, কম্পিউটার, মেটাল ডিটেক্টর ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। সুতরাং সমস্যার ধরন অনুযায়ী সঠিক যন্ত্র বা কারিগরি কৌশল ব্যবহার করতে হবে।

২৪) সঠিক তত্ত্ব ব্যবহার করুন: সঠিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থেকে সমাধানের সঠিক পথ বা উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন Social learning theory তে Albert Bandura পরামর্শ দিচ্ছেন যে, যদি সন্তানকে পরার্থবাদী আচরণ শেখাতে চাও তাহলে তেমনই আদর্শ দেখাতে হবে। কথায়, আচরণে তেমনই হবে এবং ওইরকম আচরণ করলে তাকে পুরষকার দিতে হবে।

২৫) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে: সঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সমস্যার সমাধান করা যায়। যেমন- মানুষকে চাঁদে পাঠানো। বিভিন্ন গ্রহের আবিষকার এবং এ জাতীয় অনেক কিছু। এই পদ্ধতিতে নানা ডাটা বা উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় হাইপোথিসিস (যা সত্য বলে ধরে নেয়া হয়েছে- ‘প্রকল্প’) পরীক্ষা করার জন্য। নির্দিষ্ট গবেষণা প্রণালী ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং ফলাফল সম্বন্ধে সন্দেহ রাখা হয়।

২৬) গণিত ব্যবহার করা: মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন আবিষকার, অগ্ন্যাশয়ের অসুখে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ফল দেয়, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদিতে গণিতের বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়। তেমনি ডায়াবেটিসের চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করা যায়- কোন চিকিৎসা ভালো ফল দেয়। তা করতে নতুন চিকিৎসা পাচ্ছে এমন রোগীকে রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের সাথে যারা ওই চিকিৎসা পাচ্ছে না তাদের রক্ত পরীক্ষার ফলাফল তুলনা করা যায়।

২৭) ফর্মুলা ব্যবহার করা: ফর্মুলা ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা যায়। এই ফর্মুলা কোনো রান্নার প্রণালী হতে পারে বা রাসায়নিক সেট, চাপ, তাপমাত্রা বা প্রতিষ্ঠিত কোনো কার্যপ্রণালী হতে পারে। একটা ভালো টুথপেস্ট বানাতে হলে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত ফর্মুলা ব্যবহার করে তার উপাদানগুলো পরিবর্তন করে দেখা যেতে পারে।

(ঙ) ‘লজিক’ বা যুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে সম্ভাব্য সমাধান বের করা ২৮) সদৃশ উদাহরণ (analogy) ব্যবহার করে যুক্তির দ্বারা এবং একই ধরনের সমস্যা থেকে পাওয়া সমাধান কাজে লাগানো: প্রতিদিনই নানা সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছি আমরা। অতীতের বিভিন্ন সমাধানের উপায় ব্যবহার করে যে সমাধান পাওয়া গিয়েছিল তার সাহায্য নিয়েও বর্তমানের সমস্যা সমাধান করা যায়। যেমন- পাশের বাড়ির কুকুরের বিরামহীন ডাকাডাকির যে সমাধান করেছিলেন সেই একই উপায়ে পাশের বাড়িতে জোরে জোরে গান বাজানোর সমস্যারও সমাধান করতে পারেন আপনি।

২৯) কারণ দেখে কাজ নির্ণয়াত্মক (deductive reasoning) যুক্তি কাজে লাগানো: এই পদ্ধতিতে সাধারণ নিয়মকে নির্দিষ্ট বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যখন দেখা যায় জনগণ তার নিজের প্রয়োজনে কাজ করে তখন তাদের বিশেষ ভাতা দেয়া হয়। উৎপাদন আরো বাড়ানোর জন্য এবং কোনো ঘটনা ঘটার আগে কোন কারণ থাকে এটাই আমরা জানি তাহলে হঠাৎ হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে হয় বাতাসের দূষণ বেড়ে যাওয়া।

৩০) প্রস্তাবনামূলক যুক্তি (Inductive reasoning) ব্যবহার করা: এ যুক্তিতে নির্দিষ্ট ঘটনা থেকে পাওয়া তথ্যকে সাধারণ নিয়ম তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। যেমন- যদি দেখতে চান চকলেট খেলে ‘ব্রণ’ হয় কিনা তাহলে প্রথমে ২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন চকলেট খাবেন, তারপর ২ সপ্তাহ খাবেন না, আবার ২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন খাবেন, আবার ২ সপ্তাহ খাবেন না। এই পুরো সময়টা প্রতিদিনই আপনি আপনার ত্বকের অবস্থা কী হলো লিখে রাখবেন।

৩১) মেনে নেয়া হয়েছে এমন ধারণাগুলোকে (assumption) প্রশ্ন করুন: সবসময় আমাদের মনে নানা ধারণার জন্ম নেয় যেগুলো পরীক্ষা করা হয়নি। যেমন- যদি চান শিশুদের মাদক সেবন থামাতে হবে তাহলে ‘মাদক সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান থাকলে ওরা এটা সেবন করবে না’ এই ধারণাকে নানাভাবে প্রশ্ন করুন। যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চান তাহলে এরা সবাই ক্ষমতালোভী ও আত্মকেন্দ্রিক এই ধরে নেয়াটাকে প্রশ্ন করুন। সম্ভাব্য সমাধানকে শুরু ধরে নিয়ে সমাধান খুঁজতে সাহায্য করা।

৩২) অনুমান করুন, মিলিয়ে দেখুন, নিয়ন্ত্রণ করুন: মাল্টিপল চয়েস টেস্টে যেমন খুব বেশি বিকল্প থাকে না তেমনি বিকল্প সমাধান যেখানে কম সেখানে কোনো একটা সমাধান অনুমান করুন। তারপর মিলিয়ে দেখুন। যদি ঠিক না হয় তাহলে ওই সমাধানটি বাদ দিন। শার্লক হোমসের ভাষায়, ‘যখন সব সম্ভাব্য সমাধানকে বাদ দেয়া হয় একটা বাদে তাহলে ওটাই হলো সমাধান’। যেমন  x + y = 12 এবং 2x – y = 3  এর সমাধান যে পারে না তাকে  x কী কী মানের হলে ফলাফল পাওয়া সম্ভব সেগুলো অনুমান করে পরে মিলিয়ে দেখতে হবে।

৩৩) শেষের দিক থেকে শুরু করে এগিয়ে যান (Work backwards): যেমন একটা ছাপানো গোলকধাঁধার সমাধান পেতে হলে প্রথমে শেষ গন্তব্য থেকে এগিয়ে শুরুর দিকে যান, তাহলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।

(চ) বিভিন্ন সম্ভাব্য সমাধানের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নির্ধারণ করার কৌশল ৩৪) ব্যয় ও লাভ হিসাব করুন: Deductive এবং Inductive-এর মতো যুক্তি ব্যবহার করে সমাধানের ব্যয় ও লাভ হিসাব করুন যেমন হাতে আঁচিল আছে সারাবেন- এর একটা উপায় হলো দোকান থেকে ওষুধ কেনা যেটা আঁচিলকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে। এখানে ব্যয় হলো ওষুধ কেনার টাকা, ওষুধ লাগানোর জন্য প্রতিদিন সময় ব্যয়, ব্যান্ডেজ কেনার ব্যয়, ব্যান্ডেজ পরার অস্বস্তি। অন্যরা জিজ্ঞেস করবে ‘কি হয়েছে’ এই বিব্রতকর অবস্থা এবং সম্ভবত একটা ক্ষতচিহ্ন সারা জীবনের জন্য। লাভের কি? হয়তো আঁচিলটা সেরে যাবে।

৩৫) একাধিক সমাধানের উপায় বেছে নিন প্রয়োগের জন্য: সমাধান করা মানে হলো কোনো কাজ করা। তাহলে deductiveinductive reasoning ও বৈজ্ঞানিক কৌশল কাজে লাগিয়ে সমাধানের বিভিন্ন পথ বেছে নিন। এক্ষেত্রে ব্যয় ও লাভ বের করতে হবে প্রতিটা সমাধানের পথের। যেমন- আঁচিল দূর করার জন্য কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিলেন, কিছুই করবেন না এই আশায় যে আঁচিলটা আপনা আপনি চলে যাবে এবং সারাজীবন ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াতে হবে না কিন্তু ওষুধ লাগালে হয়তো ক্ষতচিহ্ন থাকত।

৩৬) শ্রেষ্ঠ সমাধানটা ব্যবহার করুন এবং এর ফলাফল কী হলো সেই তথ্য নিন: একইভাবে deductiveinductive reasoning ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাধানের ফল কী হলো তার তথ্য সংগ্রহ করুন। তাহলে আঁচিল দূর করার জন্য কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজে থেকে যায় কি না দেখলেন। ফলাফল দেখলেন গেল না। তাহলে অন্য উপায় বেছে নিন।

(ছ) কাজকে সবচেয়ে অনুকূল রেখে সমস্যা সমাধানের কৌশল ৩৭) সমাধানের বিভিন্ন উপায় ভাবুন এবং তৎক্ষণাৎ সেগুলোর মূল্যায়ন করবেন না: সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় বিবেচনায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। নানা ধরনের উপায় হয়তো একটা সমস্যাকে সমাধান করবে কিন্তু অন্য কোনো উপায় হয়তো সস্তায় পুরোপুরিভাবে সমাধান দিতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে মূল্যায়ন করে নিজের পাওয়া ও অন্যের নিকট থেকে পাওয়া সমাধানের পথগুলোকে হয়তো দর্শন করে বা চাপা দিয়ে দেখা যায়। তাই ভালো হলো প্রথমে সে সবগুলোকে মনে রাখা, তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন না করা। কারণ অনেক সময় একটা মন্দ ধারণাই কোনো কাজে লাগার পথের সান দিতে পারে।

৩৮) মূল্য দেন এমন উদ্দেশ্য রেখে লক্ষ্য স্থির করা: যে ফলাফলের দাম দিই তেমন ফলাফল মনে রেখে লক্ষ্য স্থির করলে সমাধান করার পথে অনেক কিছু অর্জিত হয়। যেমন- অংকে A+ পেতে চান, তাহলে ওটাকে লক্ষ্য রেখে সব অংকের সমাধান করে যান A+ পাবেন এবং ভবিষ্যতে নিজের পেশা ঠিক করতে খুব সহজ হবে।

৩৯) মন সরিয়ে নেয়া, মনোযোগ নষ্ট করা এড়িয়ে চলুন: মন অন্য জায়গায় চলে গেলে সমাধানের গতি কমে যায়। মনোযোগ নষ্ট করতে পারে টেলিফোন, যন্ত্রের শব্দ ইত্যাদি। তাই শান্ত জায়গায় কাজ করতে হবে। কখনো কখনো মনে নানা চিন্তা আসে সে কারণেও মনোযোগ নষ্ট হয়, তাই চিন্তাকে ‘থামো’ বলে থামিয়ে দিতে হবে। আর একভাবে চিন্তাকে দূর করা যায় যেমন লিখে রেখে অথবা অন্য কাউকে ওই চিন্তা সম্বন্ধে বলে।

৪০) নতুন পরিবেশে কাজ করুন: নতুন পরিবেশে কাজ করলে নতুন নতুন ধারণা মাথায় আসে, যা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

৪১) নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিন সমাধান করার জন্য: সমাধান কোনোটা সহজ কোনোটা কঠিন। তাই সময় বেঁধে নিন ৩০ মিনিটের মধ্যেই এটা শেষ করব ইত্যাদি। কঠিন সমস্যার জন্য সময়টা বাড়িয়ে দিন, এতে অদক্ষতা কমবে।

৪২) অন্য কোনো মানুষ সঙ্গে নিয়ে কাজ করুন: কখনো কখনো দেখা যায় অন্যের মাথায়ও ভালো বুদ্ধি পাওয়া যায় সমাধানের। তাই খুব কঠিন সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যের সাহায্য নিন। ধূমপান নিজে ছাড়তে পারছেন না, অন্যের সাহায্য নিন, একত্রে কাজ করুন।

৪৩) ইতিবাচক মন আনুন এবং সর্বাপেক্ষা অনুকূল জাগ্রত অবস্থা সৃষ্টি করুন: মন ভালো ও ইতিবাচক থাকলে এবং মাঝারি পর্যায়ের থাকলেই একজন খুব ভালো কাজ করে। মন ভালো ও ইতিবাচক রাখার জন্য যে কাজ ভালো লাগে সেটা করুন। যেমন গান শোনা, বই, খাতা এবং নিজের জীবনের সাফল্য চিন্তা করা। অতিরিক্ত উত্তেজনা কমানোর জন্য মন, দেহ শিথিল করার পদ্ধতি ব্যবহার করুন। মনে মনে বলুন শান্ত থাকো।

৪৪) সমস্যাকে যুদ্ধে আহ্বান ও সুযোগ ভাবুন: কেউ সমস্যা চায় না। তাই সমস্যাকে দুর্ভাগ্য ও কষ্টকর কাজ মনে করি আমরা। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা কাজের পারদর্শিতা কমায়। তাই ইতিবাচক কাজের মন ও পারদর্শিতা ঠিক রাখার জন্য সমস্যাকে ChallengeOpportunity ভাবতে হবে। যদি ব্যবসায় বিনিয়োগ লাভজনক না হয় তাহলে একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরুন।

৪৫) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে চিন্তা করুন: দৃঢ় বিশ্বাস থাকলেই সমস্যা সমাধানের কাজে লেগে থাকা যায় এবং সমাধান সার্থকভাবে করতে পারলেই দৃঢ় বিশ্বাস আসে। সুতরাং পূর্বের সার্থকতা থেকে শক্তি নিন, বলুন এর চেয়েও কঠিন সমস্যা সমাধান করেছি, কী করে সমাধান করতে হয় জানি এবং এ সমস্যারও সমাধান করতে পারব।

৪৬) বিরতি দিন: একই সমস্যার সমাধানের একই ধরনের চিন্তা করতে করতে ওই ধরনটার মধ্যে আটকে যাই আমরা। কিন্তু যদি বিরতি দিই তাহলে ওই চিন্তা সরে যায় অন্য চিন্তা মাথায় আসে, মাথা তখন নতুন চিন্তার জন্য খুলে যায়। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যেই সমাধান খুঁজে পায়।

৪৭) লেগে থাকুন: লেগে থাকলেই সমাধান পাওয়া যায়। চীনের Great wall বানাতে বহু বছর লেগেছিল। সমাধানের জন্য সময় লাগে। যদি লেগে না থাকি তাহলে সমাধান ও সাফল্যের সম্ভাবনা শূন্য। লেগে থাকলে সম্ভাবনা টিকে থাকে। একটা পথে সমাধান না হলে অন্য পথে এগিয়ে যান। তবে লক্ষ্য সঠিক না হলে লেগে থাকাটাও কাজে লাগে না। কখনো কখনো বর্তমানে সমাধানযোগ্য নয় এমন সমস্যাকে গ্রহণ করে সমাধানযোগ্য অন্য সমস্যার দিকে মন দেয়াই শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখা যায়।

(জ)একাধিক সমস্যা সমাধান করার কৌশল ৪৮) সমস্যা সমাধান করার মতো মনোভাব অবলম্বন করা: যারা সমাধানের জন্য সমস্যা খুঁজে বেড়ায় তারা অন্যদের চেয়ে এ কাজে এগিয়ে থাকে। সমস্যা খুব ছোট থাকতে এবং যথেষ্ট সময় হাতে থাকতেই এরা সমাধানের কৌশল প্রয়োগ করে। যেমন একবারে ৫০ কেজি ওজন কমানোর চেয়ে ওজন বাড়ার শুরুতেই চেষ্টা করা ভালো। যারা সমস্যাকে বড় হতে অসমাধানযোগ্য হতে সময় দেয় তারা শুধু শুধুই মানসিক চাপ বাড়ায়। যেমন যারা অংক ফেলে রাখে তারা পরে অংকের বোঝা বাড়ায়।

৪৯) Triage প্রয়োগ করুন: প্রায়ই দেখা যায় একই সময়ে একাধিক সমস্যা উপস্থিত হয়। জরুরি বিভাগের ডাক্তার বা Triage পদ্ধতি ব্যবহার করে এতে প্রত্যেক রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন কতটা তা মেপে দেখেন। Triage পদ্ধতি ব্যবহারের সময় মনে রাখতে হবে-

(১) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল কী পাওয়া যাবে

(২) সমাধানের সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ

(৩) সবচেয়ে কাছের সময়সীমা কী

যদি ৩ বছরের শিশুকে outdoor-এর ভিড়ে হারান এবং আপনার ৮ বছরের শিশুর মাথাব্যথা করছে- তাহলে এই দুটো সমস্যার মধ্যে ছোট বাচ্চার ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। যদি দুটো সমস্যা থাকে যার একটা আগামীকাল সমাধান করতে হবে এবং অন্যটা ৭ দিন পর তাহলে প্রথম সমস্যার দিকে মন দিন।

খুব কম সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে বা এই সমস্যর সমাধানের সম্ভাবনা ভালো বা ওই সমস্যার সমাধানের ফল ভালো তাহলে Triage ব্যবহার করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

৫০) একবারে একটাই সমাধান করুন: অনেক সমস্যা একসাথে এলে হতাশ না হয়ে একবারে একটা সমাধানের চেষ্টা করুন। যেমন আপনি ধূমপান করেন এবং মোটা তাহলে যে কোনো একটা সমস্যা একবারে সমাধান করুন। যদি চাকরি ভালো লাগে রুমমেট ভালো লাগে না তাহলে সমাধানের জন্য যে কোনো একটা দিয়ে শুরু করুন। লেখার ও বলার দক্ষতা বাড়াতে চান তাহলে যে কোনো একটা কাজ একবারে করুন।







4 views0 comments

Comments


bottom of page