তালিকাটা করেছিলাম প্রায় বছর খানেক আগে। আমার প্রিয় ছবি। তবে এখানে স্থান দিয়েছি ইংরেজী ভাষার মুভিকে। বলা যায় হলিউড মুভি। প্রায় বছর খানেক পর লিস্টটা নিয়ে ভাবছি। বুঝতে পারছি না, ক্রামার ভার্সেস ক্রামার রাখবো কিনা। দি রিডার কি রাখবো। কিংবা হোটেল রোয়ান্ডা বা সিন্ডলার্স লিস্টটাও রাখতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে ব্রাড পিটের বাবেল-এর কথা। গড ফাদার-টু আমার বেশি পছন্দ। খুব টানছে কিলিং ফিল্ডস। এমনকি সিংগিং ইন দ্য রেইনও আমার অনেক পছন্দের ছবি। উইটনেস আরেকটা ভাললাগার ছবি। শেষ পর্যন্ত পুরানেরা লিস্টটাই রেখে দিলাম। তবে আমি নিশ্চিত তালিকা আবার বদলাবে।
১। দি শওশাঙ্ক রিডেমশন: এ ছবিটি বার বারই দেখতে চাই। আমার আজও বিষ্ময় এই ছবিটি কেন পুরস্কারের দৌড়ে খুব বেশি ভাল করলো না। তবে ইন্টারন্টে ব্যবহারকারীদের ভোটে এই ছবিটির স্থান সর্বকালে দ্বিতীয়।
জেল জীবন ও জেল পালানো ছবি। নির্মাণ এবং অভিনয় দুই দিক থেকেই এটি একটি সেরা ছবি। টিম রবিনস এবং মর্গান ফ্রিম্যান এই ছবির প্রধান দুই অভিনেতা।
২। বিফোর সানরাইজ: দুই দেশের দুই জনের দেখা হলে ট্রেনে। মাঝে তারা নেমে গেলো অষ্ট্রিয়ায়, কিছু সময় কাটাতে। বলতে গেলে এইটুকুই ছবি। কিন্তু একবার দেখা শুরু করলে চোখ ফেরানো যায় না, কান রাখতে হয় সজাগ। ছবিতে আমরা খুব বেশি কৃত্তিম সংলাপ শুনি, যেগুলো হয়তো বাস্তব জীবনে আমরা বলি না। বিফোর সানরাইজ এই দিক থেকেই টানে বেশি। আহা! আবার দখতে হবে। ইথান হক ও জুলি ডিপলি আছে এই ছবিতে। পরের পর্ব বিফোর সানসেট। দুটোই দেখতে হয়।
৩। অ্যামাদিউস: অনেক আগে ছবিটা যখন প্রথম দেখি আমি নিশ্চুপ বসে ছিলাম অনেকক্ষন। মোৎসার্টের জীবন নিয়ে ছবি। শেষ বয়সে বৃদ্ধ একজন দাবি করে যে সেই মোৎসার্টকে খুন করেছে। কিভাবে? সেটা নিয়েই ছবি। একজন ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে এসেছেন, আরেকজন চেষ্টা করে শিখেছেন মিউজিক। সেটা নিয়ে ঈর্ষার গল্প অ্যামাডিউস। গডকে যখন আনকাইন্ড বলে-সেই দৃশ্য ভোলার না।
৪। ডেড পয়েট সোসাইটি: এই ছবিতে রবিন উইলিয়ামসকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। উইটনেসের পরিচালক পিটার উইয়ারের এই ছবিটি ভিন্ন রকমের এক অনুভূতি নিয়ে আসে। এক স্কুলে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে ছবি। এক কথায় অসাধারণ।
৫। দি পারস্যুট অব হ্যাপিনেস: ক্রিস গার্ডনারের জীবন সংগ্রামের ছবি। ক্রিস (উইল স্মিথ) ও তার ছেলে ক্রিস্টোফারের (জাডেন স্মিথ) জীবনের কাহিনী এই ছবি। ক্রিস ও তার বান্ধবি জমানো সব অর্থ দিয়ে চিকিৎসা সামগ্রী-এক ধরনের স্কানার বিক্রি করে। সহজে বিক্রিও হয় না। বাড়ি ভাড়া বাকি, গাড়ি ক্রমাগত পার্কিং টিকেট খেতে খেতে এক পর্যায়ে গাড়িটাই হাতছাড়া হয়, ডে কেয়ারে রাখা ছেলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হিমসিম ক্রিস। স্কানারও চুরি হয় ক্রিসের। বান্ধবিও এক সময় ক্রিসকে ছেড়ে চলে যায় নিউইয়র্কে।
সেই ক্রিস একদিন এক ব্রোকার হাউজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একদল সুখী মানুষের চেহারা দেখে তারও ইচ্ছা হয় এখানে কাজ করতে। কিন্তু ক্রিসের সেই শিাও নেই, নেই কোনো পরিচিত। তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। কিভাবে সে ইন্টার্নির সুযোগ পায় সেও এক বিশাল গল্প। তারপরের কাহিনীও আরেক গল্প। সত্যি কাহিনীর এই ছবি যারা দেখেননি তারা জানেন না কি তারা দেখলেন না।
৬। জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ছবি। ছবিতে দেখানো হয়েছে জার্মান বিচারকদের ট্রায়াল, যারা বিচারের নামে বিরুদ্ধবাদিদের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাতো।
মুভিটা ৩ ঘন্টার। দেখতে বসলে কখন শেষ হবে টেরই পাওয়া যায় না। ছবির শুরুটা মার্কিন জাজ ডান হাওয়ার্ডের নুরেমবার্গ পৌছানোর মধ্য দিয়ে। এই চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন স্পেনসার ট্রেসি। যুদ্ধাপরাধী চার বিচারকের একজন ড. আর্নস্ট জেনিং (বার্ট লানকাসটার)। জুডি গারল্যান্ড ও মন্টোগোমারি কিফট ছোট্র দুই চরিত্রে অভিনয় করলেও তাদের অসাধারণ অভিনয়ের রেশ সহজে যায় না। আর আছে জার্মান অভিনেতা, অভিযুক্তদের পরে আইনজীবী হান্স রোলফ (ম্যাক্সিমিলিয়ান স্কেল), সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন।
৭। অন দ্য ওয়াটার ফ্রন্ট-মার্লোন ব্রান্ডোর এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৪ সালে। সাধারণ মানুষের জেগে ওঠার ছবি। আমির খানের গুলাম এই ছবির নকল। ছবিতে আমরা নায়ক চরিত্র তৈরি করা হয় অসাধারণ করে। এই ছবিটি একদমই বাস্তবতার ছবি। সাধারণ মানুষ কিভাবে এক হয় সেটাই মূল কথা।
৮। ট্যাক্সি ড্রাইভার- এই ছবিতে কেনো মার্টিন স্করসিজকে সেরা পরিচালকের অস্কার দেওয়া হয়নি-সে বিতর্ক আজও যায়নি। এই বিতর্ক ঢাকতেই স্করসিজকে তার মানের তুলনায় একটি দুর্বল ছবির জন্য অস্কার দেওয়া হয় গতবার। রবার্ট ডি নিরো আছে, আছে জুডি ফস্টার। এই ছবিতে জুডি ফস্টারকে দেখেই একজন রিগ্যানকে গুলি করেছিল। এক অস্থির সময়ের গল্প ট্যাক্সি ড্রাইভার।
৯। ক্রামার ভার্সেস ক্রামার- ডাস্টিন হফম্যানের ভাল ছবির অভাব নেই। তালিকায় অনায়াসে চলে আসে গ্রাজুয়েট ও রেইনম্যানসহ অনেক ছবি। তবে আমার বেশি পছন্দ এটি। এই ছবির আবেগ বেশি টেনেছিল বলেই হয়তো। সাথে আছে মেরিল স্ট্রীপ।
১০। মিসিং- ১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল গ্রীক পরিচালক কোস্তা গাবরাসের (উচ্চারণ ঠিক হলো?) এই ছবিটি। ছবিতে ছিলেন জ্যাক লেমন ও সিসি স্পাসেক।
১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ক্যু হয়েছে চিলিতে। চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল অগাস্টো পেনোসে মতা দখল করে কমিউনিস্ট বিরোধী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, যা ছিল ১৯৯০ পর্যন্ত। ক্যুতে খুন হন আলেন্দে।
এই দিন মার্কিন সাংবাদিক চার্লস হরমান ফিরছিলেন চিলিতে। আসতে গিয়ে পথে তিনি হয়তো সাী হয়েছিলেন এই ক্যুর। দেখে ফেলেছিলেন কিছু। তাই আর বাসায় ফিরতে পারেননি তিনি। চিলিতে ছিল বউ সিসি স্পাসেক। আমেরিকা থেকে ছেলের খোঁজে চলে আসলো বাবা জ্যাক লেমন। তারপর খোঁজার পালা।
এখানেই তৈরি দৃশ্য আর ক্যুর সময় তোলা ডকুমেন্টশন এক করে দিয়েছেন পরিচালক কোস্তা। স্টেডিয়ামে আটক হাজার হাজার চিলিবাসী বা নদীতে ভেসে যাওয়া লাশ-মনে করিয়ে দেয় ৭১ কে।
বাবা এবং ছেলের বউ ঠিকই খুঁজে খুঁজে এই ক্যুর পেছনে মার্কিন দূতাবাস ও সিআইএর হাত বের করে ফেলতে শুরু করলে এক পর্যায় পাওয়া গেছে বলে ছেলের লাশ ফেরত দেওয়া হয় বাবা ও স্ত্রীকে।
এখন কে না জানে এই ক্যুর পেছনে ছিল সিআইএ। বাবা পরে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার স্বার্থে সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। সত্য ঘটনা নিয়ে ছবি এই মিসিং।
আরেকটা তথ্য দিই, সেসময়ের চিলির মার্কিন রাষ্ট্রদূত নাথানিয়েল ডেভিস কোস্তা গাবরাসের বিরুদ্ধে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের তিপূরণ মামলা কএরছিএলন।
তালিকায় আসতে পারতো ১। লিভিং লাস ভেগাস-নিকোলাস কেজের অভিনয়ের কারণেই বার বার দেখা যায়। ২। ক্যাসাব্লাঙ্কা-ইনগ্রিড বার্গমান ও হ্যামফ্রে বোগার্টের এই ছবি যুদ্ধের ছবি, রোমান্টিক ছবি। এখনো মনে করা হয় এটিই সর্বকালের অন্যকতম সেরা ছবি ৩। পাল্প ফিকশন-নতুন ভাবে ছবির গল্প বলা সবাইকে চমকে দেয়। টরানটেনোর সেরা ছবি। ৪। ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কাক্কুস নেস্ট-জ্যাক নিকলসন মুভি ইতিহাসে থেকে যাবেন এই একটি ছবির জন্যই। ৫। গেজ হু ইজ কামিং টু ডিনার-বাবা ও মা অপো করছে মেয়ের জন্য, মেয়ে আসবে নতুন বয় ফ্রেন্ডকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। বাবা স্পেনসার ট্রেসি, মা ক্যাথারিন হেপবার্ন। মেয়ে নিয়ে আসে সিডনি পটিয়ারকে, একজন কালো। আমি এখনও মুগ্ধ এই ছবিতে।
Comments